দৈনন্দিন জীবনে তুলসীর পাতার প্রয়োগ


দৈনন্দিন জীবনে তুলসীর পাতার প্রয়োগ  তুলসী গাছ (Ocimum sanctum) প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসায় এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। একে ‘ঔষধি রানি’ বা ‘পবিত্র গাছ’ বলা হয়। প্রতিদিনের জীবনে তুলসীর ব্যবহার শরীর, মন এবং আত্মিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

দৈনন্দিন জীবনে তুলসীর পাতার প্রয়োগ


কার্তিক মাসে প্রতিদিন প্রাত্যকালে দু-তিনটি করে তুলসী পাতা খালি পেটে চিবিয়ে খেলে পুরো বছর কোন প্রকার রোগ হবে না। কাত্তিক মাসে আবহাওয়ায় তুলসী পাতার প্রয়োগে সর্বদা দেহকে নীরব রাখে। তুলসীর গন্ধ রক্ত বিকার নাশ করে।গোসল করার আগে তুলসীর কিছু পাতা  পানিতে দিয়ে কিছুক্ষণ বাদে সেই পানিতে গোসল করলে কোন প্রকার  চর্মরোগ হবে না।

দৈনন্দিন জীবনে তুলসীর পাতার প্রয়োগ  খাবার পানির পাত্রে তুলসির পাতা দিয়ে সেই পানি পান করলে উদর সংক্রান্ত কোন রোগ হবে না। তুলসী কাম বাসনার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখে। কাম শক্তি তো বৃদ্ধি করেই কিন্তু সেটা শান্তিক এবং সীমিত রূপে। তুলসী পাতা চিবলে দাঁতে কোন পোকা লাগেনা। দাঁত মজবুত দাতের আয়ু বৃদ্ধি হয়। তুলসী পাতাররস নিয়ে মালিশ করলে হাড়শক্ত হয়, দেহে ক্লান্তি দূর হয়, দেহকে নিরব রাখে। তুলসীর  রস দেহে প্রয়োগ করলে নানা প্রকার৷ দৈহিক সুস্থতা লাভ হয়।


আরো পড়ুনঃ রসুন খাবার নিয়ম ও উপকারিতা


আধ কপালী


এটি এক প্রকার মাথার যন্ত্রনা।এটি মাথার অর্ধেক অংশে হয়ে থাকে। এতে রোগী খুবই কষ্ট পাই। এরকম হলে তুলসীর কচি ডগা নিয়ে একটি পাত্রে  শুকিয়ে নিতে হবে এবং অল্প করে পিষে নিতে হবে। মাত্র ২ গ্রাম মাত্রায় নিয়ে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। এইভাবে ব্যবহার করলে অবশ্য সুফল পাওয়া যাবে।

চোখ ওঠার ক্ষেত্রে


চোখ ওঠা একটি সংক্রামক রোগ। ঠান্ডা গরমে ঘোরাফেরার ফলে এ রোগ হয়ে থাকে। এই অবস্থায় তুলসী পাতার রস চোখে কাজলের মতো লাগাতে হবে অথবা তুলসী পাতার রসের সামান্য মধু মিশিয়ে চক্ষুতে এক এক ফোটা দিতে হবে।  এইভাবে দিলে চোখ ওঠা  চোখে পানি পড়া ভালো হয়ে যায়।


কোষ্ঠকাঠিন্য


পেট পরিস্কার অর্থাৎ পায়খানা পরিষ্কার না হলে, গলার মধ্যেও তার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।কাশি এবং সে সঙ্গে মাথা ভারী হয়ে থাকে। এ অবস্থায় ২০ গ্রাম তুলসী পাতার সঙ্গে ৫০ গ্রাম ফিটকিরি চুন করে এক একটি গোল করে  চায়ের সঙ্গে মিসিয়ে নিয়ে খেতে হবে। এবংএক একটি বড়ি সকালে এবং সন্ধ্যায় পানি সহ সেবন করতে হবে। তাহলে কুষ্ঠবদ্ধতা পায়খানার কষ্ট দূর হবে।

গলিত কুষ্ট হলে


তুলসীর গাছের শিকড় তুলে এবং ভাল করে পিষ গরম পানি সহ পান করবে। তুলসী পাতার রস ও মধু মিশিয়ে খেতে হবে। যদি কুষ্ঠু খুবই বেশি প্রভাব বিস্তার করে, তাহলে তুলসী পাতার রস ও গোমূত্র একত্রে মিশ করে সকল এবং  সন্ধ্যায় খেতে হবে।

গর্ভ রক্ষায়


গর্ভসাইয়ের গোলমাল হয়ে যদি গর্ভপাত হয়ে যায়,তাহলে তুলসীর বীজ ২৫ গ্রাম নিয়ে  কাপড় দিয়েছে ছেকে নিতে হবে।মাসিক সময়ের দিনগুলিতে এবারের তিন মাত্রা ভাগ করে প্রত্যেক এক বার করে তিনবার খাওয়াতে হবে তাহলে উপকার পাওয়া যাবে। এবং গর্ভনিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্রে তুলসী গর্ভনিরোধক করে থাকে। মাসিক চলাকালীন সময়ে শেষ হলে তুলসির পাতা শুদ্ধ করে  খাওয়ালে গর্ভ সঞ্চয় হবে না। 

আরো পড়ুনঃ পেটের গ্যাসের সমস্যা সমাধানে  ৬ টি  ঘোরয়া উপাই 


দাঁতের বেদনায়


দাঁতের যন্ত্রণা খুব কষ্টদায়ক। দাঁতের যন্ত্রণা হলে তুলসির পাতা  কালো মরিচ পিষে বরি তৈরি করুন এবং যে দাতে যন্ত্রণা হচ্ছে সে দাঁতের তলায় বড়িটি রেখে দিন তাহলে যন্ত্রণা কমে যাবে। এবং দাঁতে পোকা হলে
তুলসীপাতার সঙ্গে কপূর মিশে তাতে তোলা ভিজিয়ে দাতের গুড়াই রাখতে হবে তাহলে পোকা দূর হবে।


জন্ডিস হলে


দৈনন্দিন জীবনে তুলসীর পাতার প্রয়োগ  দেহে রক্ত কম হলে এ রোগ  হয়ে থাকে। সারা দেহ ধন্য হয়ে যায়। একে নেবা ও ইংরেজিতে জন্ডিস রোগ বলা হয়। মুলো এবং তুলসীর রক্তস্বল্পতা দূর করতে প্রতিবেশীর রস পনেরো গ্রাম এবং ৫০ গ্রাম মুলোর রস এক্ষেত্রে মিশিয়ে, তাতে গুড মিশিয়ে ছেলে আরোগ্য দূর হয়। এক মাস পর্যন্ত দিনে তিন বার খেতে হবে। তুলসী পাতা ৩ গ্রাম পূর্ণ বারমুল তিন গ্রাম এগুলো এক্ষেত্রে পিষে ৫০ গ্রাম পানিতে গুনে খেতে হবে। এবং দেহে রক্তস্বল্পতার জন্য হলদে হলে তা দূর হবে। এবং রোগী সুস্থ থাকবে।


প্রস্রাবের কষ্টে


তুলসী পাতার রস খাওয়ালে প্রস্রাবের কষ্ট বেদনা কমে প্রস্রাব  হয়ে যায়। তুলসীর বীজ পানিতে কয়েক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পর, চিকেন নিয়ে তার সঙ্গে মিচ্ছরি চুন মিশিয়ে সেবন করলে, এসবের বেদনা কম হয়ে যাই।

চুল উঠে যাওয়ায়


তুলসীর ২০টিপাতা এবং আমলকির চুল দশগ্রাম একটি বড় পাত্রে ঢেলে পানি মিশ্রণ করে,১০-১৫ মিনিট পর সেই পানি মাথায় ভালো হবে বিছিয়ে নিতে হবে যাতে চুলের গোড়া সেই পানি ভাল ভাবে যায়। যখন মাথার শুকনো  হয়ে যাবে, তখন ভালোভাবে পরিষ্কার পানিতে মাথা ধুয়ে, নারকেলের তেল ভালো করে লাগাতে হবে।চুলের গোড়া শক্ত হবে এবং চুল কালো হবে। এবং টাক পড়া এটি একটি মারাত্মক রোগ। রক্ত দৃষ্টি প্রভুতি নানা কারণে এটি হয়ে থাকে। পিপুলেরকলি এবং তুলসির পাতা একসঙ্গে পিষে ঢাকের উপর  লাগাতে হবে তাহলে আরোগ্য হয়।

আরো পড়ুনঃ সর্পগন্ধা গাছের শিকড়ের উপকারিতা


বিদ্যুতিক শক লাগলে


বিজলী অর্থাৎ ইলেকট্রনিক কারেন্ট লেগে যদি কেউ অজ্ঞান হয়ে যায়, তাহলে তার মাথার, এবং মেরুদন্ডে তুলসী রস মদন করতে থাকবে কিছুক্ষণের মধ্যে  জ্ঞান ফিরে আসবে। পায়ের তলে তো তুলসির রস মাখাতে হবে। হাতের তালুতেই এভাবে দিতে হবে।


মুখের দুর্গন্ধ হলে


খাবার পর একটি বা দুটি তুলসী পাতা মুখে রেখে চিবিয়ে খেতে হবে তাহলে মুখের দুর্গন্ধচলে যাবে। দাঁতের পোকা নষ্ট হবে এবং পোকা লাগবে না।

রক্তস্রাব হলে


যেকোনো কারণে দেহ থেকে রক্ত বা স্রাব হতে থাকলে এবং বন্ধ না হলে তুলসী গাছের মূল চুন করে পাঁচগ্রাম নিয়ে পানির সঙ্গে খেলে রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যাবে।


বীর্য ক্ষীনতা


বীর্য গাড়ো এবং স্বচ্ছ হওয়া দরকার।বীর্য তরল হলে তুলসীর বীজ এবং লুচ্চির প্রত্যেকটি ৫০  গ্রাম পরিমানে নিয়ে পিষিয়ে নিতে হবে। এবং প্রত্যেক সকালে আড়াইগ্রাম উক্ত চুন গরুর দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। তুলসীর মূল চুন করে মিছরণটিসহ গরুর দুধের সঙ্গে খেলে বীর্য গাড় হয়।



শীঘ্রই পতন হলে


দৈনন্দিন জীবনে তুলসীর পাতার প্রয়োগ অনেক সময় বীর্য নানা প্রকার দোষ দেখা দেয়, যার ফলে রীতিমতো মিলন করলে সঙ্গে সঙ্গে বীর্য পাত হয়ে যায়, এবং নারী অতৃপ্তি হয়ে থাকে। এ অবস্থায় দেখা দিলে তুলসী গাছের মুল এক টুকরো সুপারির পরিবর্তে পানের মধ্যে দিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে।তাহলে শীঘ্রই পতন দূর হবে। এবং স্বপ্নদোষ এই রোগ যুবকদের ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দোষে বীর্যপাত হয়ে যায়। এই অবস্থায় তুলসির মুল খেলে উপকার হয়।

আরো পড়ুনঃ মেয়েদের জন্য ৮টি  লাভ জনক ব্যাবসা  


কানে কম শোনা


কানে কম শুনলে, অর্থাৎ শ্রবণ শক্তি কম হলে কানে তুলসী রস অল্প গরম করে সেই রস কানের মধ্যে সকাল সন্ধ্যা এক ফটা করে দিলে ভালো কাজ হয়।

শেষ কথাঃ


দৈনন্দিন জীবনে তুলসীর পাতার প্রয়োগ তুলসী শুধুমাত্র একটি ভেষজ উদ্ভিদ নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য ও মানসিক প্রশান্তির এক অনন্য উৎস। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, ঠান্ডা-কাশি ও হজমে উপকারে, এমনকি ঘরের পরিবেশ বিশুদ্ধ রাখতেও তুলসীর অবদান অসাধারণ। তাই প্রাকৃতিক চিকিৎসার বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে প্রতিদিনের জীবনে তুলসীর ব্যবহার গৃহস্থালির এক অমূল্য চর্চা হয়ে উঠতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জ্যাম ফ্লোরা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url