পেটের গ্যাসের সমস্যা সমাধানে ৬ টি ঘোরয়া উপাই

পেটের গ্যাস বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা খুব সাধারণ একটি সমস্যা, তবে এটি অস্বস্তিকর ও বিরক্তিকর হতে পারে। নিচে ৬টি কার্যকর ঘরোয়া উপায় নিচে দেওয়া হলোঃ

     

পেটের গ্যাস একটি খুব সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময়ে ভোগ করে থাকেন। এটি মূলত হজমের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে এবং এর ফলে পেট ফাঁপা, ব্যথা, ঢেকুর, বুকজ্বালা ও অস্বস্তি দেখা দেয়।

পেটের গ্যাস এমন একটি বিরক্তিকর সমস্যা যা নীরব যন্ত্রণায় ফেলে দিতে পারে আমাদের প্রতিদিনের জীবনকে। তবে আশার কথা হলো, রান্নাঘরের কিছু সাধারণ উপাদান দিয়েই আমরা এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি,এবং ওষুধ ছাড়াই, চলুন জেনে নেই কিছু পরীক্ষিত ঘরোয়া কৌশল জেনে নেওয়া জাক।


 পেজ সূচি পত্রঃ পেটের গ্যাসের সমস্যা সমাধানে  ৬ টি  ঘোরয়া উপাই

 

১. আদা-চায়ের গুণ

পেটের গ্যাসের সমস্যা সমাধানে ৬ টি  ঘোরয়া উপাই  প্রতিদিন সকালে এক কাপ গরম আদা চা শুধু গ্যাস কমায় না, বরং হজম প্রক্রিয়াও মসৃণ করে। এক টুকরো কচি আদা কুচিয়ে পানিতে ফুটিয়ে খালি পেটে খেলে পেট ফোলাভাব কমে দ্রুত। আদা প্রাকৃতিকভাবে হজমে সহায়ক। এটি পাকস্থলীতে পাচনের রস বৃদ্ধি করে, ফলে খাবার দ্রুত হজম হয় এবং অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হয় না।আদা-চা পাকস্থলীর মাংসপেশি শিথিল করতে সাহায্য করে, ফলে অন্ত্রে জমে থাকা গ্যাস সহজে বের হয়ে যায়। গ্যাসের কারণে যদি বমি বা বমি বমি ভাব হয়, আদা-চা দ্রুত সেই সমস্যা দূর করতে পারে।

উপকরণ:

✔ ১ কাপ পানি
✔ ১ ইঞ্চি টাটকা আদা কুচি বা থেঁতো করা
✔ ১ চা চামচ গ্রিন টি বা সাধারণ চা পাতা (আপনার ইছা মত)
✔ সামান্য লেবুর রস বা মধু (আপনার ইছা মত)

যে ভাবে বানাবেন:

✔ পানি ফুটিয়ে তাতে আদা দিয়ে ৫-৭ মিনিট সিদ্ধ করুন।
✔  চাইলে চা পাতা যোগ করে আরও ২ মিনিট ফুটিয়ে নিন।
✔  নামিয়ে গরম গরম পান করুন।
✔  লেবু বা মধু মেশালে স্বাদ ও উপকারিতা বাড়ে।


২. মেথি বীজ ভেজানো পানি

পেটের গ্যাসের সমস্যা সমাধানে ৬টি ঘোরয়া উপাই  রাতে এক চামচ মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে, সকালে সেই পানি পান করুন। মেথি বীজ হজমে সহায়তা করে ও অন্ত্রে জমে থাকা বাতাস কমায়। পেট ফাঁপা, গ্যাস্ট্রিক, ও বদহজম কমাতে সাহায্য করে।অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে সহায়ক, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তায় মেথির মধ্যে থাকা গ্যাল্যাকটোমানন নামক উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে ও ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। ওজন কমাতে সহায়তা করে মেথি ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় পেট ভরা ভরা অনুভূতি দেয়, ফলে খাবার খাওয়া কমে যায়।মেথি পানি চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে,ত্বকে ব্রণ ও ইনফ্লেমেশন কমায় বিশেষ ক্ষেত্রে হিলাদের হরমোন ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে। পিরিয়ড অনিয়মিত হলে নিয়মিত মেথি পানি পান উপকারী হতে পারে।

 কোলেস্টেরল কমায়

✔ খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

যে ভাবে তৈরি করবেন

✔ ১ টেবিল চামচ মেথি বীজ ১ গ্লাস পানিতে রাতভর ভিজিয়ে রাখুন।

✔ সকালে খালি পেটে পানি ছেঁকে খেয়ে ফেলুন।

✔  প্রতিদিন ১ গ্লাসই যথেষ্ট।

✔ যদি গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা বেশি থাকে, তাহলে ২ দিন পর পর খাওয়া ভালো।

আরও পড়ুনঃ 

 ৩.  পুদিনা পাতার কাঁচা রস

পুদিনা পাতা হজমে সহায়তা করে, গ্যাস, বদহজম, ও পেটে অস্বস্তি দূর করে। এতে থাকা মেনথল হজমের রস নিঃসরণে সাহায্য করে। বমি বমি ভাব ও বমি প্রতিরোধে ভ্রমণের সময় বা গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব হলে পুদিনার রস খেলে তা উপশম হয়। শ্বাসকষ্ট ও সর্দি-কাশি উপশমের ক্ষেত্রে  এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সর্দি, কাশি, ও হাঁপানির জন্য উপকারী। ত্বক ভালো রাখতে পুদিনার রসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ আছে, যা ব্রণ ও ত্বকের ইনফেকশন কমাতে সহায়তা করে। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে প্রাকৃতিক মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে কাজ করে, ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে মুখকে সতেজ রাখে। পুদিনা হজম বাড়িয়ে বিপাকক্রিয়া (metabolism) উন্নত করে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

⚠️ সতর্কতা:

✔ অতিরিক্ত খেলে গ্যাস বা অম্বল হতে পারে।

✔ যাদের এলার্জি থাকে, তাদের আগে একটু পরীক্ষামূলকভাবে নেওয়া উচিত।

✔ শিশুদের বা গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা উত্তম।

ব্যবহারের উপায়: 

 ✔ ৫-৬টি পুদিনা পাতা ভালো করে ধুয়ে ব্লেন্ড করে পানি ছেঁকে রস বের করুন।

✔  সকালে খালি পেটে বা খাবারের পর ১ চা চামচ করে খাওয়া যেতে পারে।





৪. জিরা আর কালোজিরার চূর্ণ

জিরা (Cumin) ও কালোজিরা (Black Seed বা Nigella sativa) — এই দুইটি মসলা ও ভেষজ উপাদান বহু বছর ধরেই আয়ুর্বেদিক, ইউনানী এবং লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যখন এগুলোর চূর্ণ (গুঁড়ো) করে ব্যবহার করা হয়, তখন সেগুলোর গুণাগুণ আরও সহজে শরীরে কাজ করে।

কালোজিরার চূর্ণ 

 উপকারিতা:

● রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
● ঠাণ্ডা-কাশি, শ্বাসকষ্টে উপকারী
● ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
● মাথাব্যথা ও শরীরের ব্যথায় আরাম দেয়
● চুলপড়া ও ত্বকের রোগে উপকারী

ব্যবহার:

● সকালে এক চিমটি কালোজিরার গুঁড়ো মধুর সঙ্গে খাওয়া যায়।
● গরম পানির সঙ্গে খেলে কফ উপশমে সাহায্য করে।
● তেল দিয়ে মালিশে ব্যবহার করা যায় (যদি চূর্ণ থেকে তেল তৈরি করা হয়)।

জিরার চূর্ণ

উপকারিতা:

● হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
● গ্যাস, বদহজম, পেটের ব্যথা উপশমে সহায়তা করে
● আয়রনের ভালো উৎস, রক্তশূন্যতায় উপকারী
● রুচি বাড়ায়
● ঠাণ্ডা-কাশিতে উপকার দেয়

ব্যবহার:

● এক চা চামচ জিরার চূর্ণ হালকা গরম পানিতে খালি পেটে খাওয়া যায়
● রান্নাতেও মসলা হিসেবে ব্যবহার করা যায়
● দই বা ছানার সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়

⚠️ সতর্কতা:

অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয় (প্রতিদিন ১/২ চা চামচের বেশি নয়)
গর্ভবতী নারী ও শিশুর ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত
যাদের অ্যালার্জি বা গ্যাস্ট্রিক প্রবণতা আছে, তারা সাবধানে ব্যবহার করুন

৫. বেলের পাতা ও দুধ

 বেলের পাতা হলো বেলগাছের (বৈজ্ঞানিক নাম: Aegle marmelos) পাতা। এটি ত্রিপত্র (তিনটি পাতার সমন্বয়ে গঠিত) এবং হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত পবিত্র হিসেবে গণ্য হয়। আয়ুর্বেদিক ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায়ও বেলের পাতার বহুল ব্যবহার রয়েছে।বেলের পাতা ও দুধ এই দুটি উপাদান সাধারণত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা, প্রাকৃতিক প্রতিকার এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহার হয়ে থাকে।পুরনো বাংলা চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি হলো বেলের কচি পাতা বেটে তার সঙ্গে সামান্য দুধ মিশিয়ে খাওয়া। এটি কেবল গ্যাসই কমায় না, পেটের অন্যান্য অস্বস্তিও দূর করে। দুধ হলো স্তন্যপায়ী প্রাণীর স্তন্যগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত একটি পুষ্টিকর তরল। গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদির দুধ মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও মিনারেলস থাকে।

উপকারিতা:

● পাচন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বদহজম ও গ্যাস্ট্রিক দূর করতে সাহায্য করে।
● ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
● লিভার সুরক্ষা দেয় টক্সিন পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
● জ্বর ও ঠান্ডা-কাশিতে উপকারী পাতার রস গরম করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
● ধর্মীয় গুরুত্ব শিব পূজায় বেলপাতা অপরিহার্য; বিশ্বাস করা হয়, এটি শিবের প্রিয় পত্র।

উপকারিতা:

 ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড় ও দাঁত শক্ত করে।
● প্রোটিন দেহের গঠনে সহায়তা করে।
● ভিটামিন ডি ও বি১২ রক্ত তৈরিতে এবং স্নায়ুতন্ত্রে সহায়ক।
● ত্বক পরিষ্কার ও মসৃণ করে  রূপচর্চায়ও ব্যবহৃত হয়।
● ধর্মীয় ব্যবহার পূজায় দুধ দিয়ে অভিষেক করা হয় (বিশেষ করে শিবলিঙ্গে)।


 ৬. ধনে জল ও শসার সংমিশ্রণ

ধনে জল ও শসার সংমিশ্র (Coriander-Cucumber Detox Water)  এটি একটি স্বাস্থ্যকর ও প্রাকৃতিক ডিটক্স পানীয়, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে, হজমে সাহায্য করতে ও টক্সিন বের করতে সহায়তা করে। ধনে জল ও শসার সংমিশ্র হলো ধনে পাতা বা বীজ এবং শসা ব্যবহার করে তৈরি এক ধরনের ভেষজ পানীয়, যা পান করলে শরীরকে আর্দ্র রাখে, পেট ঠান্ডা করে এবং হজম ও রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে।ধনে পাতা আর শসা একসঙ্গে পিষে এর রস পান করলে পেট ঠাণ্ডা থাকে ও হজম ভালো হয়, ফলে গ্যাস উৎপাদন হ্রাস পায়।

উপকরণ

● ধনে পাতা (তাজা) / ধনে বীজ- ১ মুঠো পাতা বা ১ চা চামচ বীজ

● শসা-১টি (পাতলা করে কাটা)

● পানি-১ লিটার

● লেবুর রস (ঐচ্ছিক)-১ চা চামচ

●  মধু (ঐচ্ছিক)-১ চা চামচ

যে ভাবে তৈরি করবেন:

● ধনে পাতা ভালো করে ধুয়ে নিন (বীজ হলে সামান্য ভেজান ৩০ মিনিট)।
● শসা পাতলা গোল করে কেটে নিন।
● এক লিটার পানিতে ধনে পাতা/বীজ ও শসা দিয়ে দিন।
● চাইলে লেবুর রস ও সামান্য মধু মেশাতে পারেন।
● এটি একটি জারে ঢেলে ফ্রিজে রেখে দিন ৩–৪ ঘণ্টা (সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা)।
● এরপর ছেঁকে ঠান্ডা অবস্থায় পান করুন।

উপকারিতা:

● হজমে সাহায্য করে
● শরীর ঠান্ডা রাখে
● ডিহাইড্রেশন রোধ করে
●  রক্ত পরিশোধনে সহায়তা করে
● ওজন কমাতে সহায়ক
● শরীরের টক্সিন পরিষ্কারে কার্যকর

⚠️ সতর্কতা:

● প্রতিদিন নতুন করে তৈরি করুন।
● ডায়াবেটিস থাকলে মধু বাদ দিন।
● বেশি পুরনো পানি না খাওয়াই ভালো।



শেষ কথাঃ

পেটের গ্যাসের সমস্যা সমাধানে ৬ টি ঘোরয়া উপাই  পেটের গ্যাস হঠাৎ হওয়া কোনো সমস্যা নয়,এটি অনেক সময় আমাদের খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস, চাপ ও পানি খাওয়ার অভাব থেকেও হতে পারে। তাই শুধু ঘরোয়া উপায় নয়, সঙ্গে চাই পরিমিত খাওয়া, ধীরে   চিবিয়ে খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান এবং নিয়মিত হাঁটাহাঁটি। শরীর শুনলে মনও শান্ত থাকবে ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জ্যাম ফ্লোরা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url