সর্পগন্ধা গাছের শিকড়ের উপকারিতা
ভুমিকাঃ
১. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
পেজ সূচি পত্রঃ
- সর্পগন্ধা গাছের শিকড়ের উপকারিতা
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
- মানসিক উত্তেজনা ও উদ্বেগ কমায়
- ঘুমের ওষুধ হিসেবে কাজ করে
- মনঃসমীক্ষণ ও স্নায়ুবিক রোগে কার্যকর
- হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক
- বিষাক্ত সাপ বা পোকামাকড়ের কামড়ে উপকারী
- হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক
- সর্পগন্ধা গাছের শিকড়ের উপকারিতা
- শেষ কথা সর্পগন্ধা গাছের শিকড়ের উপকারিতা
২. মানসিক উত্তেজনা ও উদ্বেগ কমায়
শিকড়ের নির্যাস মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।এটি ঘুমের সমস্যা বা ইনসমনিয়া কমাতেও ব্যবহৃত হয়। সর্পগন্ধার শিকড়ে থাকা প্রধান সক্রিয় রাসায়নিক উপাদান হলো রেসারপিন। এটি স্নায়ুতন্ত্রে সেরোটোনিন, ডোপামিন ও নরঅ্যাড্রেনালিন নামক রাসায়নিকগুলোর মাত্রা কমিয়ে দেয়। এর ফলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত উত্তেজনাবা উদ্বেগসৃষ্টিহয় না।সর্পগন্ধা গাছের শিকড় স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে।সর্পগন্ধা শিকড়ে থাকা উপাদানগুলো মস্তিষ্কের অতিসক্রিয় স্নায়ুকে শিথিল করে। ফলে ঘুম সহজে আসে এবং মস্তিষ্ক শিথিল থাকে।উচ্চ রক্তচাপও উদ্বেগ ও উত্তেজনার একটি কারণ। সর্পগন্ধা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, ফলে চাপ কমে যায় ও মস্তিষ্কে প্রশান্তি আসে।
যেভাবে ব্যাবহার করবে:৩. ঘুমের ওষুধ হিসেবে কাজ করে
প্রাকৃতিক ঘুমের ওষুধ হিসেবে সর্পগন্ধার শিকড় ব্যবহৃত হয়। এটি স্নায়ু শিথিল করে ঘুম এনে দেয়।সর্পগন্ধার শিকড়ে থাকা রেসারপিন মন শান্ত করতে এবং উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে। এটি স্নায়ুতন্ত্রের উত্তেজনা কমিয়ে ঘুমের আবেশ সৃষ্টি করে।ঘুমের সমস্যা (insomnia) এবং মানসিক অস্থিরতায় এটি কার্যকরী বলে বহু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
যেভাবে ব্যাবহার করবে:
• শুকনো সর্পগন্ধা শিকড় গুঁড়ো করে রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য পরিমাণ (প্রায় ২০০-৩০০ মি.গ্রা.) পানি বা দুধের সঙ্গে খাওয়া হয়।
• কখনও কখনও এটি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারেও ব্যবহৃত হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
সতর্কতা:
• অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করা বিপজ্জনক হতে পারে—মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত রক্তচাপ হ্রাস, বিষণ্নতা ইত্যাদি হতে পারে।
• গর্ভবতী নারী, বুকের দুধ খাওয়ানো মা, নিম্ন রক্তচাপ বা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি গ্রহণ নিষিদ্ধ বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণযোগ্য নয়।
৪.মনঃসমীক্ষণ ও স্নায়ুবিক রোগে কার্যকর
ব্যাবহার বিধি
• শুকনো শিকড় গুঁড়ো করে দিনে ২৫০–৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় খাওয়া হয় (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)।
• এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
• অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণে বিষক্রিয়া হতে পারে।
• যকৃত, কিডনি রোগী বা গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
• রিসারপিন গ্রহণে অবসাদ, হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া বা রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে যেতে পারে।
👉আরও পড়ুনঃ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ গাছ
৫. হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক
এর উপাদান হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। সর্পগন্ধার মূল উপাদান রেসারপাইন (reserpine), যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে, যার ফলে হৃদস্পন্দন ধীর হয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে। নিয়মিত ব্যবহারে হৃদপিণ্ডে অতিরিক্ত চাপ পড়ে না, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। রেসারপাইন হৃদপিণ্ডের উপর উত্তেজনা হ্রাস করে এবং অতিরিক্ত ধাক্কাধাক্কি বা অনিয়মিত হার্টবিট কমাতে সহায়তা করে। এটি স্ট্রেস এবং উদ্বেগজনিত হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসে কার্যকর। রক্তনালির প্রশস্ততা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সর্পগন্ধা রক্তনালিকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয় এবং হৃদপিণ্ডে রক্ত পৌঁছানো সহজ হয়। এই কারণে হৃদরোগজনিত স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে।
যেভাবে ব্যাবহার করবেন:
• সর্পগন্ধা শিকড়ের গুঁড়ো ১/৪ থেকে ১/২ চা চামচ পরিমাণে দিনে ১-২ বার খালি পেটে গরম জল/দুধের সাথে খাওয়া যেতে পারে।
• তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কখনোই নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত নয়।
সতর্কতা:
• অতিরিক্ত ব্যবহারে রক্তচাপ খুব বেশি কমে যেতে পারে।
• মাথা ঘোরা, বিষণ্ণতা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
• গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি নিষিদ্ধ।
• যাদের আগে থেকে ডিপ্রেশন বা মানসিক সমস্যা আছে, তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
৬. বিষাক্ত সাপ বা পোকামাকড়ের কামড়ে উপকারী
প্রাচীনকালে সাপ বা বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড়ে সর্পগন্ধার শিকড় চিবিয়ে বা পেস্ট করে ব্যবহার করা হতো। এটি সর্পগন্ধার শিকড়ে থাকা উপাদান (যেমন: রেসারপিন, সারপেন্টিন) কিছুটা বিষনাশক বৈশিষ্ট্য রাখে। সাপের কামড় বা বিষাক্ত পোকার কামড়ে প্রাথমিক অবস্থায় এটি প্রয়োগ করলে শরীরের বিষক্রিয়ার গতি ধীর করতে সহায়তা করতে পারে। ব্যথার ক্ষেত্রে এতে থাকা উপাদান স্নায়ুর উত্তেজনা কমিয়ে ব্যথা ও শারীরিক অস্থিরতা হ্রাস করে, যা বিষক্রিয়ার একাংশ মোকাবেলায় সহায়ক হতে পারে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিষক্রিয়ার ফলে রক্তচাপে ওঠানামা হতে পারে। সর্পগন্ধার শিকড় রক্তচাপ কমাতে কার্যকর, যা এই অবস্থায় উপকারী হতে পারে।
👉আরও পড়ুনঃ অ্যালোভেরা জেল চূলের জন্য ব্যাবহারের উপাই
যেভাবে ব্যাবহার করবেন:
• শিকড় শুকিয়ে গুঁড়ো করে বা বেটে পেস্ট করে আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করা হয়।
• কখনো কখনো অল্প পরিমাণ সর্পগন্ধার শিকড়ের রস খাওয়ানো হয় (কঠোর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে)।
সতর্কতা:
• সাপের কামড় বা মারাত্মক বিষাক্ত পোকার দংশনে সর্পগন্ধা কখনোই একমাত্র চিকিৎসা নয়।
• টি সহায়ক বা প্রাথমিক ঘরোয়া ব্যবস্থা হিসেবে প্রয়োগ করা যেতে পারে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই সবচেয়ে জরুরি।
• শিকড় ব্যবহারে মাত্রাতিরিক্ত হলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
৭. হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক
সর্পগন্ধার শিকড় অন্ত্রে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে পাচনের গতি উন্নত করে, ফলে খাবার সহজে হজম হয়। এর প্রাকৃতিক উপাদান পাকস্থলীর অম্লতা (অ্যাসিড) নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যার ফলে গ্যাস্ট্রিক ও অম্বলের সমস্যা কমে। মলত্যাগের ক্ষেত্রে হজম ঠিক না থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়েরিয়া হতে পারে। সর্পগন্ধার শিকড় অন্ত্রের গতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ করে মলত্যাগে স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্রে এটি স্নায়ুতন্ত্রে প্রশান্তি এনে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়, ফলে পাচনতন্ত্রের ওপর চাপ কমে। বমি বমি ভাব ও অরুচি দূর করতে হজম না হলে অনেক সময় বমি ভাব বা খাবারে অরুচি দেখা দেয়। সর্পগন্ধার শিকড়ে থাকা উপাদান এগুলো প্রশমিত করতে সহায়ক।
যেভাবে ব্যাবহার করবেন:
• শুকনো সর্পগন্ধার শিকড় গুঁড়া করে দিনে ১-২ বার সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যায় (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)।
• এটি সাধারণত ২০০ মি.গ্রা. থেকে ৩০০ মি.গ্রা. পর্যন্ত মাত্রায় ব্যবহার করা হয়।
সতর্কতা:
• সর্পগন্ধা রক্তচাপ কমানোর জন্যও ব্যবহৃত হয়। তাই যাদের রক্তচাপ কম, গর্ভবতী নারী, বা যারা কোনো হৃদরোগের ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা উচিত।
👉আরও পড়ুনঃ তেলাকুচা পাতার উপকারিতা চুলের যত্নে
শেষ কথাঃ
সর্পগন্ধা গাছের শিকড় একটি প্রাচীন ও শক্তিশালী প্রাকৃতিক ঔষধ যা উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক চাপ, অনিদ্রা, হজম সমস্যা ও স্নায়বিক রোগে উপকারী। তবে এর ব্যবহারে সাবধানতা জরুরি, কারণ মাত্রাতিরিক্ত সেবনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই এটি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই কোনও অভিজ্ঞ হারবাল বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি হতে পারে আপনার স্বাস্থ্যের এক অমূল্য প্রাকৃতিক সহায়। তবে শারীরিক সক্ষমতা হিসেবে কাজ করে থাকে।
জ্যাম ফ্লোরা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url