সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও সুস্থ জীবন জাপনের চাবি কাঠি আসেন তা আমরা জেনে নি ঃ
ভুমিকাঃ
চিয়া সিড বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত। এটি স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা চান, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী একটা বীজ।
চিয়া সিড কী?
চিয়া সিড হলো এক ধরনের ছোট, কালো বা সাদা বর্ণের বীজ, যা মূলত Salvia hispanica নামক উদ্ভিদের বীজ। এই উদ্ভিদটি পুদিনা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত এবং মূলত মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় উৎপন্ন হয়।
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার ১১টি উপকারিতা নিচে দেওয়া হলঃ
১. ওজন কমাতে সাহায্য করে:
চিয়া সিড পানিতে ভিজালে এটি জেলির মতো আকার ধারণ করে এবং পেট ভরে রাখে দীর্ঘক্ষণ। এতে ক্ষুধা কমে যায়, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। চিয়া সিডে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার থাকে, যা খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে। ফলে অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। চিয়া সিড রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যা হঠাৎ খিদের ঝোঁক কমায় এবং ওজন বাড়া রোধ করে। চিয়া সিড শরীরের বিপাকক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে, যা শরীরের অতিরিক্ত চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে।
যাদের এলার্জি বা বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়, তবে দিনে ১০ গ্রাম থেকে ১৫গ্রাম বা ২ চা চামচ যথেষ্ট।
২. হজমশক্তি উন্নত করে:
এতে রয়েছে প্রায় ৩৪% পর্যন্ত ফাইবার, যা পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। চিয়া সিড পানিতে ভিজালে এটি ফুলে জেলি জাতীয় আকার নেয়। এটি পাকস্থলীতে গিয়ে ধীরে ধীরে হজম হয়, ফলে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং খাবার সহজে হজম হয়। চিয়া সিডের জেলি-জাতীয় গঠন পাকস্থলীর এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা গ্যাস্ট্রিক ও বুক জ্বালাপোড়া কমায় নিয়মিত চিয়া সিড খেলে অন্ত্র পরিষ্কার থাকে, যা হজমশক্তি বাড়ানোর একটি বড় কারণ।
পেজ সূচি পত্রঃ সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা"
◾ সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
◾ চিয়া সিডের স্বাস্থ্য উপকারিতা
◾ খালি পেটে চিয়া সিড কেন খাবেন
◾ওজন কমাতে চিয়া সিড
◾ চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক নিয়ম
◾ সকালে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
◾ চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ
◾ চিয়া সিড খেলে কি ওজন কমে
◾ চিয়া সিড কীভাবে খাবেন
◾হজম শক্তি বাড়াতে চিয়া সিড
৩. রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে:
চিয়া সিড ধীরে হজম হয় বলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দ্রুত বাড়ে না। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী । চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে, যা খাবারের পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ধীরে বাড়ায়। এতে হঠাৎ ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে, চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের কোষকে রক্ষা করে এবং মেটাবলিজম ঠিক রাখতে সাহায্য করে, যা সুগার কন্ট্রোলে সহায়ক। বিশেষ ক্ষেত্রে চিয়া সিড নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, যা রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম:
৪. হার্টের সুস্থতা রক্ষা করে:
বর্তমানে হৃদরোগ বা হার্টের সমস্যা বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর। চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য উপাদান দেহে প্রদাহ কমায়। দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ হার্ট অ্যাটাক ও অন্যান্য হার্ট সমস্যা তৈরি করে, যা নিয়মিত চিয়া সিড খেলে হ্রাস পায়। চিয়া সিডে থাকা উচ্চমাত্রার আঁশ বা ফাইবার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
৫. শক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি করে:
প্রাকৃতিক এনার্জি বুস্টার হিসেবে কাজ করে চিয়া সিড। খালি পেটে খেলে সারাদিন মনোযোগ ও উদ্যম বজায় থাকে। চিয়া সিড পানি শোষণ করে ফুলে ওঠে। এটি শরীরে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে, ফলে ডিহাইড্রেশন কমে ও শরীর সতেজ থাকে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিয়া সিডে ওমেগা-৩ প্রচুর পরিমাণে থাকায় এটি মনোযোগ, স্মৃতি এবং ফোকাস বাড়াতে সাহায্য করে। চিয়া সিড রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থির রাখে, যা হঠাৎ ক্লান্তি বা শক্তি কমে যাওয়া রোধ করে। এতে কর্মক্ষমতা বাড়ে।
কিভাবে খাবেন ?
৬. ত্বক ও চুলের উন্নতি ঘটায়:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা-৩ থাকার ফলে চিয়া সিড ত্বককে করে উজ্জ্বল এবং চুলকে করে মজবুত। ভেতর থেকে চুলের পুষ্টি বৃদ্ধির ফলে চুলের প্রাকৃতিক ঝলক ফিরে আসে এবং চুল হয় মসৃণ ও চকচকে। চিয়া সিড স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা খুশকি বা শুষ্ক স্ক্যাল্পের সমস্যা কমায়। ওমেগা-৩ ও মিনারেলস চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। নিয়মিত সঠিক পুষ্টি পেলে নতুন চুল সহজে গজায়, এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং ব্রণের প্রবণতা হ্রাস করে।
👉 আরও পড়ুন ঃ ডায়েট প্ল্যানে চিয়া সিড ব্যবহার করার সহজ উপায়
৭. ডিটক্সে সহায়ক:
চিয়া সিড শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। এটি লিভার ও কিডনি পরিষ্কার রাখতেও সহায়ক। চিয়া সিডে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত খেলে দেহের বর্জ্য সহজে বেরিয়ে যায়, ফলে শরীর থাকে হালকা ও টক্সিন-মুক্ত। চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে খেলে এটি জেলি জাতীয় আকার ধারণ করে, যা হজমে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। ডিটক্সের সময় শরীরের পর্যাপ্ত পানি দরকার। চিয়া সিড শরীরে পানির ভারসাম্য ধরে রাখে, যা শরীর পরিষ্কারে সহায়ক।
কীভাবে খাবেন ?
১ চামচ চিয়া সিড এক গ্লাস পানিতে ২০–৩০ মিনিট ভিজিয়ে খালি পেটে খেয়ে নিন। চাইলে এতে লেবুর রস ও মধু যোগ করে আরও উপভোগ্য করে তুলতে পারেন।
অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয় (প্রতিদিন ১–২ চামচ যথেষ্ট)।
যাদের ফুড অ্যালার্জি আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া শুরু করুন।
পতি দিন না খেয়ে সপ্তাহে (২–৩) খেলেই ভালো হয়।
৮.হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা:
৯.দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
১০.পেটের সমস্যা দূর করাই খুবই উপকারি :
পানি ফুলে গেলে সকালে খালি পেটে বা রাতে ঘুমানোর আগে খেতে পারেন।
১১.অ্যানিমিয়া রোধে চিয়া সিড :
অ্যানিমিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন বা লোহিত রক্তকণিকা (RBC) থাকে না। এর ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, ক্লান্তি আসে, মাথা ঘোরে, ও মনোযোগ কমে যায়। চিয়া সিডে ভালো পরিমাণে আয়রন থাকে (প্রতি ২ চা চামচে প্রায় ২.২ মি.গ্রা আয়রন)। এটি হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়তা করে,রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে। রক্তশূন্যতা কমাতে সহায়ক। চিয়া সিড লেবু পানিতে ভিজিয়ে খেলে আয়রন সহজে শোষিত হয়।
কিভাবে খাবেন :
১ টেবিল চামচ চিয়া সিড ১ গ্লাস পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।
চিয়া সিড ফুলে গেলে সেটি পান করুন।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অথবা সন্ধ্যায় খেতে পারেন।
সতর্কতা:
✔ দৈনিক ১-২ টেবিল চামচের বেশি না খাওয়াই ভালো।
✔বেশি খেলে হজমের সমস্যা বা পেট ফাঁপার সম্ভাবনা থাকে।
✔ পানির সাথে ভালোভাবে ভিজিয়ে খাওয়া উচিত, কারণ শুষ্ক অবস্থায় খেলে শ্বাসনালিতে আটকে যেতে পারে।
✔যদি আপনি ওষুধ খাচ্ছেন বা গুরুতর অ্যানিমিয়া থাকে, আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
জ্যাম ফ্লোরা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url