তেলাকুচা পাতার উপকারিতা চুলের যত্নে

 তেলাকুচা পাতার অসাধারণ উপকারিতা চুলের যত্নে আসেন আমরা জেনে নি তেলাকুচা পাতা কেমন উপকারিঃ 


ভুমিকাঃ 

প্রাকৃতিক উপাদানের প্রতি মানুষের আগ্রহ বরাবরই বেশি। বিশেষ করে চুলের যত্নে যারা কেমিকেলমুক্ত সমাধান খুঁজছেন, তাদের জন্য তেলাকুচা পাতা (Trichosanthes dioica) হতে পারে একটি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক উপায়। সাধারণত তেলাকুচা গাছ আমাদের গ্রামের ঝোপঝাড়ে সহজেই দেখা যায়। যদিও এটি মূলত সবজি হিসেবে পরিচিত, কিন্তু এর পাতা যে চুলের যত্নেও অত্যন্ত কার্যকর, তা অনেকেই জানেন না।

আজকের এই পোস্টে জেনে নিন কীভাবে তেলাকুচা পাতা আপনার চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে।


তেলাকুচা পাতার ৫টি উপকারতা  নিচে দেওয়া হলঃ 

১. খুশকি দূর করে:

তেলাকুচা পাতায় রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা মাথার ত্বকের খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যবহারে মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকে এবং নতুন খুশকির উৎপত্তি কমে যায়। খুশকি শুধু সৌন্দর্যহানিকর নয়, বরং এটি মাথার ত্বকের জন্য বেশ অস্বস্তিকর সমস্যা। চুল পড়া, চুলের রুক্ষতা, চুলকানি—সব কিছুর মূল কারণ অনেক সময় খুশকি। বাজারের কেমিকেলযুক্ত শ্যাম্পু বা তেল অনেক সময় সাময়িক সমাধান দিলেও স্থায়ীভাবে খুশকি দূর করতে প্রাকৃতিক উপাদানের বিকল্প নেই। এর মধ্যে অন্যতম হলো তেলাকুচা পাতা


প্রয়োজনীয় উপকরণ:

✔ ৮-১০টি তেলাকুচা পাতা
✔ ২-৩ টেবিল চামচ নারিকেল তেল (ঐচ্ছিক, শুষ্ক চুলে ব্যবহার করতে পারেন)
✔ ১ টেবিল চামচ লেবুর রস (খুশকি বেশি হলে)


ব্যবহার পদ্ধতি:

১. প্রথমে তেলাকুচা পাতা ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
২. পাতাগুলো ব্লেন্ড করে পাতলা পেস্ট বা রস বের করে নিন।
3. চাইলে এতে নারিকেল তেল ও লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
৪. এই মিশ্রণটি সরাসরি মাথার ত্বকে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন।
৫. ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত রেখে দিন।
৬. এরপর কুসুম গরম পানি ও মাইল্ড হার্বাল শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন।

কতদিন ব্যবহার করবেন?

✔ সপ্তাহে ২-৩ বার নিয়মিত ব্যবহার করলে খুশকি দৃশ্যমানভাবে কমে আসবে।
✔ ৩-৪ সপ্তাহ টানা ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।

পেজ সূচিপত্রঃ

২. চুল পড়া রোধ করে:

তেলাকুচা পাতা, যা বৈজ্ঞানিকভাবে (Trichosanthes dioica ) নামে পরিচিত, এতে রয়েছে প্রাকৃতিক ভিটামিন-এ, সি, ক্যালসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এগুলো মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, চুলের গোড়া মজবুত করে এবং নতুন চুল গজাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। ফলে নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া ধীরে ধীরে কমে যায়।

প্রয়োজনীয় উপকরণ:

✔︎ ৮-১০টি তেলাকুচা পাতা
✔︎ ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল (ঐচ্ছিক)
✔︎ ১ চা চামচ কালোজিরার তেল (চুল পড়া বেশি হলে)

ব্যবহার পদ্ধতি:

১. তেলাকুচা পাতা ভালোভাবে ধুয়ে ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করুন।
২. চাইলে এতে নারিকেল তেল ও কালোজিরার তেল মিশিয়ে নিন।
৩. এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন।
৪. পুরো মাথায় সমানভাবে লাগিয়ে নিন এবং ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন।
৫. এরপর মাইল্ড হার্বাল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

কতদিন ব্যবহার করবেন?

✔︎ ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে চুল পড়া কমবে।
✔︎ চুলের গোড়া মজবুত হবে।
✔︎ নতুন চুল গজানোর সম্ভাবনা বাড়বে।
✔︎ মাথার ত্বকে প্রাকৃতিক সজীবতা ফিরে আসবে


৩. চুলের প্রাকৃতিক বৃদ্ধি বাড়ায়:

তেলাকুচা পাতায় রয়েছে ভিটামিন-এ, সি এবং নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যাদের চুল ধীরে বাড়ছে বা পাতলা হয়ে যাচ্ছে, তারা নিয়মিত এই পাতার ব্যবহার করতে পারেন। চুলের সৌন্দর্য শুধু বাহ্যিক নয়, এটি আমাদের আত্মবিশ্বাসের বড় একটি অংশ। কিন্তু বর্তমান ব্যস্ত জীবনযাত্রা, দূষণ, মানসিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে অনেকেরই চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে বা চুলের বৃদ্ধি থমকে গেছে। বাজারের নামী-দামী প্রসাধনী ব্যবহার করেও যখন কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না, তখন প্রয়োজন হয় প্রকৃতির কাছ থেকে সমাধান খোঁজার।


প্রয়োজনীয় উপকরণ:

✔︎ ১০-১২টি তেলাকুচা পাতা
✔︎ ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল বা নারিকেল তেল
✔︎ ১ চা চামচ আমলকির রস (ঐচ্ছিক, কিন্তু কার্যকর)


ব্যবহার পদ্ধতি:

১. তেলাকুচা পাতা ভালোভাবে ধুয়ে পেস্ট বা রস বের করুন।
২. এর সঙ্গে অলিভ অয়েল বা নারিকেল তেল ও আমলকির রস মিশিয়ে নিন।
৩. এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন।
৪. পুরো মাথায় সমানভাবে লাগিয়ে ৩০-৪৫ মিনিট রেখে দিন।
৫. এরপর কুসুম গরম পানি ও মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।


কতদিন ব্যবহার করবেন?

 ✔︎ সপ্তাহে ২-৩ বার নিয়মিত ব্যবহারে ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

 ✔︎ ১-২ মাস পর থেকে চুলের প্রাকৃতিক ঘনত্ব ও বৃদ্ধি দৃশ্যমান হবে।


৪. মাথার চুলে শীতলতা আনে:

বর্তমান সময়ে অনেকেই মাথার অতিরিক্ত গরম বা জ্বালাপোড়ার সমস্যায় ভোগেন। এর ফলে মাথার ত্বকে চুলকানি, খুশকি, চুল পড়া এমনকি চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে গরমের দিনে এই সমস্যা আরও বেশি দেখা যায়। তেলাকুচা পাতা প্রাকৃতিকভাবেই এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।

যেভাবে তেলাকুচা পাতা মাথার ত্বকে শীতলতা আনে?

(ক) প্রাকৃতিক ঠান্ডা গুণাগুণ:
তেলাকুচা পাতায় রয়েছে প্রাকৃতিক ঠান্ডা বা শীতলকারী উপাদান, যা সরাসরি মাথার ত্বকে লাগানোর পর তাৎক্ষণিকভাবে ঠান্ডা অনুভূতি এনে দেয়। এটি ত্বকের ভেতরের উত্তাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

(খ) প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন কমায়:
মাথার ত্বকে কোনো কারণে জ্বালা বা প্রদাহ সৃষ্টি হলে, তেলাকুচা পাতার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান তা কমিয়ে মাথার ত্বককে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

(গ) অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব নিয়ন্ত্রণ:
গরমের সময় মাথায় অতিরিক্ত ঘাম বা তেল বের হলে ত্বকে গরমভাব তৈরি হয়। তেলাকুচা পাতা মাথার অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্বাভাবিক ঠান্ডা পরিবেশ বজায় রাখে।

(ঘ) মানসিক প্রশান্তি আনে:
অনেক সময় মাথায় ঠান্ডা অনুভূতি মানসিক প্রশান্তিও দেয়, যার ফলে স্ট্রেস বা টেনশন কমে। আর স্ট্রেস কমলে চুল পড়াও কমে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ:

✔︎ ১০-১২টি তেলাকুচা পাতা
✔︎ ২ টেবিল চামচ ঠান্ডা নারিকেল তেল (ইছা থাকলে)

ব্যবহার পদ্ধতি:

১. পাতাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে ব্লেন্ড করে রস বের করুন।
২. চাইলে ঠান্ডা নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন।
৩. এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন।
৪. ৩০ মিনিট রেখে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।


কতদিন ব্যবহার করবেন?

১.যাদের মাথায় অতিরিক্ত গরম ভাব, ঘাম বা জ্বালাপোড়া হয়।
২. যাদের মাথার ত্বকে প্রদাহ বা চুলকানি আছে।
৩.গরমের দিনে যারা মাথার স্বাভাবিক ঠান্ডা রাখতে চান।


👉আরও পড়ুনঃখুশকি দূর করার ৫টি প্রাকৃতিক উপায়

নারিকেল তেল ও তেলাকুচা পাতার মিলিত ব্যবহার
 প্রাকৃতিকভাবে চুলের ঘনত্ব বাড়ানোর টিপস

৫. আগা ফাটা রোধে সহায়ক:

চুলের আগা ফাটা মানে শুধু সৌন্দর্যহানিই নয়, বরং এটি চুলের ভঙ্গুরতা, শুষ্কতা এবং পুষ্টির ঘাটতির স্পষ্ট লক্ষণ। অনেকেই শ্যাম্পু বা প্রসাধনীর মাধ্যমে সমাধান খোঁজেন, তবে প্রকৃতির সহজলভ্য উপাদান, যেমন তেলাকুচা পাতা, এই সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে। প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় রাখার উপাদান,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-সি, যা চুলকে মজবুত করে।মাথার ত্বক থেকে চুলের ডগা পর্যন্ত পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধি করে। চুলের রুক্ষতা ও শুষ্কতা কমায়, ফলে আগা ফাটা কমে গুরুত্ব পণ্য কথা তেলাকুচা পাতা চুলের গোড়া এবং ডগা উভয়ের যত্ন নেয়, যার ফলে নতুন আগা ফাটা হওয়ার প্রবণতা কমে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ:

✔︎ ৮-১০টি তেলাকুচা পাতা
✔︎ ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল
✔︎ ১ চা চামচ মধু (ঐচ্ছিক, চুল অতিরিক্ত শুষ্ক হলে)

ব্যবহার পদ্ধতি:

১. তেলাকুচা পাতা ভালোভাবে ধুয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
২. পেস্টের সঙ্গে নারিকেল তেল ও মধু মিশিয়ে নিন।
3. এই মিশ্রণটি বিশেষ করে চুলের আগার দিকে ভালোভাবে লাগান।
৪. গোড়ায় লাগালেও ভালো, তবে ডগার যত্ন বেশি নিন।
৫. ৩০-৪৫ মিনিট রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।


কতদিন ব্যবহার করবেন?

✔ সপ্তাহে অন্তত ২ বার নিয়মিত ব্যবহারে আগা ফাটার সমস্যা কমে যাবে।
✔ ১ মাসের মধ্যে চুলের ডগা তুলনামূলক মসৃণ ও শক্ত দেখাবে। 
✔ আগা ফাটা প্রতিরোধে লম্বা মেয়াদে ব্যবহার উপকারী।

শেষ কথাঃ

তেলাকুচা পাতা আমাদের আশেপাশে সহজলভ্য হলেও এর কার্যকারিতা অনেক। নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া কমবে, খুশকি দূর হবে এবং চুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়বে। তাই কেমিকেল বাদ দিয়ে প্রাকৃতিক তেলাকুচা পাতা দিয়েই শুরু করুন চুলের যত্ন। চুলের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য ধরে রাখতে বাজারের কেমিকেলযুক্ত পণ্য নয়, বরং প্রকৃতির উপাদানই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর। তেলাকুচা পাতা আমাদের আশেপাশে সহজলভ্য হলেও এর উপকারিতা অনেকেই জানেন না। নিয়মিত তেলাকুচা পাতা ব্যবহার করলে চুলের আগা ফাটা, খুশকি, চুল পড়া কমবে এবং চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাড়বে। পাশাপাশি মাথার ত্বক থাকবে ঠান্ডা ও সতেজ। আমরা সধারণত বেশি  শেম্পু শাবান ইত্যাদি এসব জিনিস মাথাই দি এসব না দিয়ে প্রাকৃতিক সমাধানে আজ থেকেই তেলাকুচা পাতা দিয়ে যত্ন শুরু করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জ্যাম ফ্লোরা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url