শিশুদের মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা

                                                                             

শিশুদের পরিবারের ভালবাসা  কেমন হয়া উচিত তা  নিচে দেওয়া হল ঃ

                                                                      




ভুমিকাঃ

শিশু একটি কাঁচা মাটির মতো, যার রূপ গঠন নির্ভর করে যত্ন, পরিচর্যা এবং ভালোবাসার উপর। একটি শিশুর জীবনের শুরু থেকেই তার মানসিক, শারীরিক ও নৈতিক বিকাশে পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবার হচ্ছে শিশুর প্রথম বিদ্যালয়, আর পিতা-মাতা হলো তার প্রথম শিক্ষক। শিশুরা পরিবারের মধ্যেই প্রথম হাঁটতে শেখে, কথা বলতে শেখে, ভালো-মন্দ চিনতে শেখে এবং সমাজের আচরণবিধি বুঝতে শুরু করে। তাই শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবার যেমন ভিত্তি, তেমনি শক্তিশালী দিকনির্দেশকও।


 ভালোবাসা ও স্নেহ শিশুর আত্মবিশ্বাস গঠনের মূল ভিত্তি


পিতা-মাতা বা পরিবারের সদস্যদের থেকে পাওয়া ভালোবাসা, স্নেহ ও যত্ন শিশুর মনে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করে। এই নিরাপত্তাবোধ থেকেই জন্ম নেয় আত্মবিশ্বাস। একটি শিশুর উপর অবিচার, অবহেলা বা রূঢ় ব্যবহার তার মানসিকতাকে দুর্বল করে তোলে। কিন্তু ধৈর্য, সহানুভূতি ও ইতিবাচক মনোভাব শিশুর মননশীলতাকে সমৃদ্ধ করে।


  কথোপকথন ও সময় দেওয়া


শিশুর সঙ্গে প্রতিদিন কিছু সময় কথা বলা, তার মনের কথা শোনা, তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এবং শেখার সুযোগ করে দেওয়া মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। শিশুরা যখন দেখে তাদের কথা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তখন তারা মানসিকভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং স্বাধীনভাবে ভাবতে শেখে।


 নৈতিক শিক্ষা ও ভালো আচরণের চর্চা


শিশুরা যা দেখে, সেটাই শেখে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যদি পরস্পরের প্রতি সম্মান, সৌজন্য, সহনশীলতা ও সদ্ব্যবহার বিদ্যমান থাকে, তাহলে শিশুরাও সেই আচরণ নিজেদের মধ্যে আত্মস্থ করে নেয়। বিপরীতে, পারিবারিক অশান্তি, মারধর বা গালাগাল শিশুর মনে ভয়ের জন্ম দেয় এবং তা তার ব্যক্তিত্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।


 ভুলের প্রতি সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি


শিশুরা ভুল করবেই—এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের ভুলে শাস্তি না দিয়ে ধৈর্য ধরে বোঝানো উচিত। এতে তারা শেখার আগ্রহ পায় এবং ভয়ের চেয়ে ভালোবাসা দিয়ে শেখা বাস্তবায়িত হয়। শিশুর ভুলকে সংশোধনের সুযোগ দিলে সে পরবর্তীতে আরও দায়িত্ববান ও আত্মনির্ভর হয়ে ওঠে।


গল্প, খেলাধুলা ও সৃজনশীল কাজে উৎসাহ


শিশুদের মানসিক বিকাশে শিক্ষামূলক গল্প, চিত্রাঙ্কন, পাজল, খেলাধুলা ও সৃজনশীল কাজ যেমন গান, আবৃত্তি, নাটক প্রভৃতি খুবই কার্যকর। এসব কাজে পরিবারের সক্রিয় অংশগ্রহণ শিশুর মধ্যে কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা বাড়ায়।



 উপসংহার:

সন্তানের মানসিক গঠনে বাহ্যিক শিক্ষা যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো পারিবারিক পরিবেশ ও আচরণ। একটি শিশুর মন গঠিত হয় তার পারিপার্শ্বিক অভিজ্ঞতা ও ভালোবাসা থেকে। পরিবারের যত্নশীলতা, সময় দেওয়া, সহানুভূতি এবং ইতিবাচক আচরণ একটি শিশুকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করে। তাই বলা যায়, শিশুর মানসিক বিকাশের মূল ভিত্তি পরিবার, আর একটি সুস্থ সমাজ গঠনের শুরু হয় একটি সুন্দর পরিবার থেকেই।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জ্যাম ফ্লোরা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url