ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক
ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক ভাতের মাড় আমাদের ঘরের রান্নায় একেবারেই পরিচিত একটি উপাদান। ভাত রান্নার পর যে ঝোল বা পানি ঝরে যায়,তাকেই ভাতের মাড় বলা হয়। বহু গ্রামীণ পরিবারে এটি পুষ্টিকর পানীয় কিংবা সৌন্দর্যচর্চায়।
ব্যবহৃত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। অনেকে এটিকে সহজলভ্য শক্তি ও ঠাণ্ডা লাগা বা দুর্বলতা দূর করার উপায় হিসেবেও মনে করেন। তবে সব কিছুর যেমন ভালো দিক আছে, তেমনি কিছু ক্ষতিকর দিকও থেকে যায়।
পেজ সুচি পত্রঃ ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক
ভাতের মাড়ের অতিরিক্ত ব্যবহার বা অযথা নির্ভরশীলতা স্বাস্থ্যের জন্য কখনো কখনো ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের ভাতের মাড় ক্ষতিকর
ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক ভাতের মাড়ে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ ও শর্করা থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে।নিয়মিত বা অতিরিক্ত ভাতের মাড় পান করলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।অনেক সময় ভাতের মাড় খাওয়ার কারণে আসল ভাতের ভেতর থাকা আঁশ, প্রোটিন, খনিজ ইত্যাদি উপেক্ষিত হয়, ফলে সুষম পুষ্টি পাওয়া যায় না।
ভাতের মাড়ে থাকা অতিরিক্ত শর্করা কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হজমের গোলমাল, গ্যাস বা পেট ফাঁপার সমস্যা তৈরি করতে পারে।ভাতের মাড়ের উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক (GI) থাকার কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। একই সঙ্গে অতিরিক্ত শর্করা হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।অনেকে মনে করেন ভাতের মাড় শরীরকে ঠাণ্ডা ও আর্দ্র রাখে।
কিন্তু এতে প্রকৃতপক্ষে খনিজের ঘাটতি পূরণ হয় না। উল্টো, অতিরিক্ত মাড় খেলে প্রয়োজনীয় লবণ ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।ভাতের মাড়ে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ ও শর্করা থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এটি দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।এতে ক্যালোরি বেশি থাকায় নিয়মিত ভাতের মাড় খেলে শরীরে চর্বি জমতে শুরু করে।
ফলে স্থূলতা বা ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে।ভাতের মাড় হজমে ভারী হয়ে যেতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে এটি গ্যাস, অম্বল ও পেট ফাঁপার সমস্যা তৈরি করে।অনেক সময় অনেকে ভাতের বদলে শুধু মাড় পান করেন। এতে শরীর পর্যাপ্ত প্রোটিন, আঁশ ও অন্যান্য খনিজ পায় না, ফলে সুষম খাদ্যের অভাব দেখা দেয়।
হৃদরোগের ঝুঁকি হই ভাতের মাড়ের
ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক ভাতের মাড়ে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট থাকে। নিয়মিত বা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে শরীরে বাড়তি গ্লুকোজ জমে যায়, যা পরবর্তীতে চর্বি ও ট্রাইগ্লিসারাইডে রূপান্তরিত হয়। এগুলো রক্তনালিতে জমে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।অতিরিক্ত মাড় পান করলে শরীরের ক্যালোরি চাহিদার চেয়ে বেশি শক্তি পাওয়া যায়, যা ওজন বাড়ায়। স্থূলতা আবার হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ।
ভাতের মাড়ে প্রয়োজনীয় খনিজ ও লবণ না থাকায় এটি শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে। এতে রক্তচাপ ওঠানামা করে, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগে প্রভাব ফেলে।এবং ভাতের মাড় নিয়মিত খেলে শরীরে বারবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে ইনসুলিন নিঃসরণ বেশি হয়, আর দীর্ঘমেয়াদে শরীর ইনসুলিনের প্রতি অসংবেদনশীল হয়ে পড়ে।
এই অবস্থা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ানোর পাশাপাশি হৃদরোগেরও ঝুঁকি তৈরি করে।শুধু ভাতের মাড়ের উপর নির্ভরশীল হলে শরীর প্রয়োজনীয় আঁশ, ভিটামিন, খনিজ ও প্রোটিন থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয় এবং হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখার জন্য দরকারি পুষ্টি উপাদানও ঘাটতি পড়ে।অতিরিক্ত ভাতের মাড় খাওয়ার কারণে ওজন বাড়লে রক্তচাপও বেড়ে যায়।
উচ্চ রক্তচাপ সরাসরি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।ভাতের মাড় নিয়মিত খেলে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া, এবং ট্রাইগ্লিসারাইড বৃদ্ধির মতো সমস্যা একসাথে দেখা দেয়। এই অবস্থাকে মেটাবলিক সিন্ড্রোম বলে, যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।শর্করা বেশি খেলে শরীরে ইনসুলিনের পাশাপাশি অন্য হরমোনের ভারসাম্যও নষ্ট হয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি শুধু ডায়াবেটিস নয়, বরং হৃদপিণ্ড ও রক্তনালির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
⚠ বিশেষ সতর্কতা ভাতের মাড়ের
ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক হৃদরোগী বা ডায়াবেটিস রোগীদের (ভাতের মাড় এড়িয়ে চলা )উচিত।যদি খেতেই হয়, তবে খুব অল্প পরিমাণে এবং মাঝে মাঝে খাওয়া ভালো।সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে শাক-সবজি, ফল, ডাল, মাছ, মাংস ও আঁশযুক্ত খাবার নিয়মিত খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমানো যায়।
ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক শেষ কথাঃ ০৫
ভাতের মাড় আমাদের রান্নাঘরের পরিচিত একটি উপাদান হলেও এর ব্যবহার নিয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। এটি শরীরে সাময়িক শক্তি দিলেও অতিরিক্ত শর্করার কারণে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং ট্রাইগ্লিসারাইড বৃদ্ধি ঘটিয়ে দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের প্রবণতা রয়েছে, তাদের জন্য ভাতের মাড় একেবারেই উপকারী নয়।এবং ভাতের মাড় নিয়ে আমাদের দেশে নানা ধরণের প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে। অনেকে মনে করেন এটি শরীর ঠান্ডা রাখে, দুর্বলতা কমায় কিংবা সহজে শক্তি যোগায়।
কিছুটা সত্য হলেও এর ক্ষতিকর দিকও অস্বীকার করা যায় না। এতে প্রচুর স্টার্চ ও শর্করা থাকায় ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
জ্যাম ফ্লোরা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url